বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
আলহামদুলিল্লাহ, ওয়াসসালাতু ওয়াসসালামু আলা রাসূলিল্লাহ আম্মা বা’দ-
মহান আল্লাহ তাআলা সমস্ত সৃষ্টি কুলের মধ্যে মানবজাতিকে আকল (বিবেক/বুঝশক্তি) দানের মাধ্যমে সর্বশ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা দান করেছেন এবং বিশেষভাবে মানুষকেই দিয়েছেন জ্ঞাণ অর্জনের যোগ্যতা। এর মাধ্যমে মানুষ যেমন তার পার্থিব প্রয়োজন পূরণের উত্তম পন্থা আবিষ্কার করতে পারে তেমনি অর্জন করতে পারে যুক্তি নির্ভর ন্যায়-অন্যায়বোধ ৷ এটা ছিল আল্লাহ তাআলার সাধারণ ও ব্যাপক অনুগ্রহ সমস্ত মানব জাতির প্রতি ৷ অত:পর وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ .অর্থাৎ আমি মানুষ ও জিন জাতিকে সৃষ্টি করেছি কেবলমাত্র আমার ইবাদত (দাসত্ব) করার জন্য ৷ (সূরা জারিয়াত, আয়াত ৫৬) এর দাবী বাস্তবায়নের জন্য দান করেছেন ওহীর ইলম ৷ যাতে করে মানুষ তার বিবেক ও যুক্তির গণ্ডি পেরিয়ে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টি, হালাল-হারাম এবং আখিরাতের সফলতা-ব্যর্থতার জ্ঞানও লাভ করতে পারে। হতে পারে সাধারণ মুমিন মানুষের চেয়েও মর্যাদাবান, লাভ করতে পারে জীবন নামক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে অসীম পুরস্কার জান্নাত ৷ মানুষ ছাড়া অন্যান্য প্রাণীর এই যোগ্যতা নেই। কেননা প্রত্যেক প্রাণীর মধ্যেই রয়েছে জীবন ধারণের জন্য সহজাত বোধ ও প্রবণতা। যার দ্বারা চালিত হয়ে তারা আত্মরক্ষা করে ও বংশ বিস্তার করে। কিন্তু এ পর্যন্তই। পশু-পাখির জীবন প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে স্বভাবের গন্ডিতে বাধা। স্বভাবের বৃত্ত থেকে তাদের উত্তরণ ঘটে না। পক্ষান্তরে মানুষ শিক্ষা অর্জন করে এবং শিক্ষা দান করে। শিক্ষার মাধ্যমে অজানাকে জানার এবং জানা বিষয়কে কাজে লাগিয়ে অজানার সন্ধান করার যোগ্যতা একমাত্র মানুষেরই আছে। তাই পৃথিবীর শাসন ও নিয়ন্ত্রণের ভার তাদের উপর অর্পিত।
ইসলামে শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। হেরা গুহায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর সর্বপ্রথম যে ওহী নাযিল হয় তা হচ্ছে, ‘পড়, তোমার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্তপিন্ড থেকে।’-সূরা আলাক : ১-২
শিক্ষাকে যদি বিশ্লেষণ করা হয় তাহলে দেখা যাবে যে, শিক্ষা মৌলিকভাবে দুই প্রকার : জাগতিক শিক্ষা ও দ্বীনী শিক্ষা। মানুষের জাগতিক প্রয়োজন পূরণের উপযোগী জ্ঞান ও বিদ্যা হচ্ছে জাগতিক শিক্ষা। যেমন বিজ্ঞান, চিকিৎসা, গণিত ইত্যাদি। এই শিক্ষার মূল সূত্র অভিজ্ঞতা। পক্ষান্তরে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টির জ্ঞান হচ্ছে দ্বীনী শিক্ষা। এই শিক্ষার মূল সূত্র ওহী। যা আল্লাহর ইলম থেকে নবী-রাসূলগণের মাধ্যমে আমাদের নিকট এসেছে ৷ জাগতিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা মানুষ স্বাভাবিকভাবেই মানুষ বোঝে ৷ ফলে এ শিক্ষার প্রচার-প্রসার আবহমানকাল থেকে অধ্যবদি গুরুত্বের সঙ্গে চলতেছে ৷ অথচ সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি মুসলিম উম্মাহ। এ জাতি তার দ্বীনী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব না বোঝার কারণে তাদের জাতীয় (ইসলামি) শিক্ষা, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, রাজনীতির স্বকীয়তা হারিয়েছে অনেক আগেই। ভেঙ্গে চুরমার হয়েছে ঈমানী-আখলাকী বুনিয়াদ। বৃটিশোত্তর ভারতীয় উপমহাদেশ তার জলন্ত স্বাক্ষী। বিশেষ করে বহুমুখি সঙ্কটে নিপতিত হয় ইসলামের লালনভূমি বাংলাদেশ। ক্রমেই হারাতে থাকে ইসলামী মূল্যবোধ ও ঐতিহ্য। হুমকির মুখে পড়ে মুসলিম উম্মাহর নতুন প্রজন্ম। ১৯শ শতাব্দীর শুরুর দিক। নুয়ে পড়া সে উম্মাহকে জাগিয়ে তুলতে ও স্থবির দেহে প্রাণ ফিরিয়ে আনতে নতুন করে কদম ফেলে দারুল উলুম দেওবন্দবন। এতে করে মুসলিম উম্মাহর পুরুষদের মাঝে ইসলামী শিক্ষা, সংস্কৃতির কিছুটা উন্নতি হলেও নারীরা পড়ে থাকে বৃটিশরে মনস্তাত্ত্বিক গোলামির আস্তাকুঁড়ে। ফলে ইসলামি শিক্ষা বিবর্জিত নারী জাতির বেপর্দা ও নির্লজ্জতায় ধ্বংস হচ্ছে পুরো মুসলিম জাতি। ফলে আগ্রহী ও উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা অভাব অনুভব করেন মেয়েদের দ্বীনী শিক্ষার। কেননা স্নেহধন্য মায়ের কোল সন্তানের প্রথম শিক্ষা কেন। মা সন্তানের প্রাথমিক ও মৌলিক শিক্ষিকা। মায়ের শিক্ষা শিশুর জীবন গঠনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বিশেষভাবে কার্যকরী। পৃথিবীতে পুরুষের চেয়ে মহিলার সংখ্যা বেশী আবার মহিলার চেয়ে শিশুর সংখ্যা বেশী। এ ক্ষেত্রে মাতৃজাতিই যদি ইসলামী শিক্ষায় বঞ্চিত থেকে যায় তবে শিশুরা শিখবে কোত্থেকে? তাই বর্তমান ও অনাগত শিশুদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনায় নারী শিক্ষার অপরিহার্যতা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। এ দৃষ্টিকোন থেকেই সমাজের চিন্তাশীল ব্যক্তিবর্গ মহিলাদের শিক্ষার উপর গুরুত্ব উপলব্ধি করে মহিলা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার উপর বিশেষ জোর দিয়ে থাকেন। কেননা মা যদি শিক্ষিতা, দ্বীনদার ও তৌহিদবাদি আদর্শ মুসলিমা হন, তবেই তার অনুসরণে সন্তান আদর্শ মুসলিমরূপে গড়ে উঠতে বাধ্য। এরই ফলশ্রুতিতে ইনশাআল্লাহ ইসলামী পরিবার ও সমাজ গড়ে উঠবে এতে সন্দেহের অবকাশ নেই। উপরোক্ত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই ২১ শে ফেব্রুয়ারী ২০০০ ইং সন থেকে “জামিয়া ইসলামিয়া ফাতেমাতুজ্জাহরা কওমী মহিলা মাদ্রাসা” সাধারণ শিক্ষার সমন্বয়ে একটি বাস্তবধর্মী শিক্ষা মিশনে তার পথচলা শুরু করে। অব্যাহত পথচলার ধারাবাহিকতায় ২০১০ সাল থেকে যুক্ত হয় হযরতহামজা রা. কওমী মাদরাসা (বালক শাখা)। যুগোপযোগী দক্ষ আলিমে দ্বীন এবং সমাজের সর্বস্তরের জন্য দেশপ্রেমিক, সৎ ও যোগ্য নাগরিক তৈরি। এ মিশনের মুল লক্ষ। পাঠদান শুরু হয় নুরানী ও প্রাক-প্রাথমিক থেকে দাওরা হাদিস (মাস্টারস) পর্যন্ত। ক্রমান্বয়ে বড় হতে থাকে কুরআন ও হাদিসের ছাত্র-ছাত্রীদের এ আঙ্গিনা। সর্বোপরি আল্লাহর রহমত আমাদের পথচলাকে করেছে মসৃন ও সুঢ়। অভিষ্ট লক্ষ্যের তুলনায় আমাদের মনজিল বহুদুর। অবিরত পথচলায় পরিবর্তনমুখী এ পদক্ষেপ দীর্ঘ হবে ইনশাআল্লাহ। প্রত্যাশা করি, সুরের সে পথ পাড়ি দিতে সত্য ও সুন্দরের প্রত্যাশী সবাই জামিয়া ইসলামিয়া ফাতেমাতুজ্জহরা কওমী মহিলা মাদ্রাসার সাথে আছেন এবং অনাগত দিনগুলোতেও সদয় থাকবেন। আল্লাহ তা’আলা আমাদের সকল সীমাবদ্ধতা মাড়িয়ে সীরাতে মুস্তাকীমের উপর অটল থাকার তাওফীক দিন। আমীন!